বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড- Bangladesh Water Development Board

 

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বাংলাদেশের একটি বিশেষায়িত সরকারী সংস্থা, যা দেশের পানি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং উন্নয়নে কাজ করে। এর সদর দপ্তর ঢাকায় অবস্থিত এবং বর্তমানে বোর্ডের মহাপরিচালক হিসেবে জনাব মুহাম্মদ আমিরুল হক ভূঞা দায়িত্ব পালন করছেন।

পাউবোর প্রতিষ্ঠা ও ইতিহাস:

পাউবো ১৯৫৭ সালে জাতিসংঘের অধীনে গঠিত ক্রুগ মিশন এর সুপারিশ অনুযায়ী পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (ইপিওয়াপদা) গঠন করা হয়, যা পরে পাউবো হিসেবে পরিবর্তিত হয় এবং দেশের বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ প্রকল্প, এবং পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা পরিচালনা করতে শুরু করে।

স্বাধীনতার পর পাউবোর পুনর্গঠন:

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ৫৯ এর মাধ্যমে ইপিওয়াপদা এর পানি অংশকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড হিসেবে পুনর্গঠন করা হয়। এটি একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং বাংলাদেশের পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটি প্রধান সংস্থা হিসেবে কাজ শুরু করে।

আইনি কাঠামো:

পাউবো আইনি কাঠামোর মাধ্যমে দেশটির পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জাতীয় পানি নীতি-১৯৯৯ এবং জাতীয় পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ২০০৪ এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাপাউবো আইন, ২০০০ প্রণয়ন করা হয়, যার আওতায় বোর্ডের শীর্ষ নীতি নির্ধারণ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করা হয়। পাউবোর শীর্ষ নীতি নির্ধারণ ও পরিচালনার জন্য একটি ১৩ সদস্য বিশিষ্ট পানি পরিষদ গঠিত, যার নেতৃত্বে থাকেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী

পাউবোর মূল কার্যক্রম:

পাউবো দেশের বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ প্রকল্প, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, এবং কৃষি ও মৎস্য সম্পদের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে। এটি দেশের পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন ও সংরক্ষণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

অংশগ্রহণমূলক পানি ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের পানি সম্পদের সমন্বিত ও টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। এই ব্যবস্থাপনায় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে, পানি সংক্রান্ত দুর্যোগ মোকাবিলা এবং খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। এর মাধ্যমে নদী ভাঙন, ভূমি পুনরুদ্ধার, লবণাক্ততা নিরসন, এবং সমন্বিত উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়নসহ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করা যায়।

অংশগ্রহণমূলক পানি ব্যবস্থাপনার লক্ষ্য:

  1. পানি সম্পদের টেকসই উন্নয়ন: অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থাপনায় জনসাধারণ এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়, যাতে তারা পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে এবং এটি টেকসই হয়ে উঠে।

  2. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা: পানি সংক্রান্ত দুর্যোগ (যেমন বন্যা, খরা, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা) মোকাবিলায় জনগণের প্রস্তুতি এবং সহায়তার জন্য পরিকল্পনা গড়ে তোলা। এর মাধ্যমে জনগণের জানমাল রক্ষা করা হয়।

  3. সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন: সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধি করা হয়, যা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক।

  4. নদী ভাঙনরোধ এবং ভূমি পুনরুদ্ধার: নদী ভাঙন প্রতিরোধের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যা ভূমি পুনরুদ্ধারের কাজকেও সহজ করে। এতে কৃষি উৎপাদন এবং জনবসতির নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায়।

  5. লবণাক্ততার নিরসন: উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততার সমস্যার সমাধান করা, যা কৃষির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

  6. জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলীয় এবং অন্যান্য এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এর বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায়।

  7. আরো কার্যকরী অংশীদারিত্ব: পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন অংশীদারদের মধ্যে সমন্বয় এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ বাড়ানোর মাধ্যমে এটি আরও কার্যকর করা হয়। এতে জনগণের অবদানও বৃদ্ধি পায়।

উদ্দেশ্য:

  • খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: সেচ ব্যবস্থা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা, যাতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
  • দারিদ্র্য নিরসন: পানি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও টেকসই ব্যবহারের মাধ্যমে জনসাধারণের জীবিকার সুযোগ বৃদ্ধি করা।
  • আরো সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা: সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে জলসম্পদ ব্যবস্থাপনায় জনগণের সম্পৃক্ততা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।

এই কৌশলগুলির মাধ্যমে, দেশের পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটি দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন এবং জনকল্যাণমূলক কাজ নিশ্চিত করা সম্ভব।

Post a Comment

Previous Post Next Post