পদ্মা বাংলাদেশের একটি প্রধান নদী এবং এটি গঙ্গানদীর প্রধান শাখা হিসেবে পরিচিত। নদীটি হিমালয়ে উৎপন্ন গঙ্গা নদী থেকে শাখা হয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে প্রবাহিত হয়। পদ্মা নদী বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী, যার দৈর্ঘ্য ৩৪১ কিলোমিটার (২০২৩ সালের নদী রক্ষা কমিশন রিপোর্ট অনুযায়ী) এবং গড় প্রস্থ ১০ কিলোমিটার। এই নদীটি বাংলাদেশের উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের নদী নং ৩২ হিসেবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) দ্বারা পরিচিত।
উৎপত্তি ও প্রবাহ:
পদ্মা নদী হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন গঙ্গা নদী থেকে শাখা হয়ে রাজশাহী জেলার মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং এখানে এটি পদ্মা নামে পরিচিত হয়। এরপর এটি যমুনা নদীকে পেছনে ফেলে গোয়ালন্দে এসে মিশে যায়। এরপর পদ্মার মিলিত প্রবাহ চাঁদপুর জেলার মেঘনা নদীর সাথে মিলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরের দিকে প্রবাহিত হয়।
প্রধান উপনদী ও শাখা নদী:
পদ্মা নদীর প্রধান উপনদী গুলি হল:
- মহানন্দা: চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা।
- পুনর্ভবা: বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
পদ্মা নদীর অন্যান্য শাখা নদীগুলি হলো:
- গড়াই
- বড়াল
- আড়িয়াল খাঁ
- কুমার
- মাথাভাঙ্গা
- কপোতাক্ষ
- মধুমতী
- পশুর
- ভৈরব
এই নদীগুলি কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, যশোর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, নড়াইল, মাগুরা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী সহ বিভিন্ন জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক গুরুত্ব:
পদ্মা নদী বাংলাদেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি, ও সমাজে গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর বিখ্যাত উপন্যাস "পদ্মা নদীর মাঝি" এই নদীর তীরবর্তী মানুষের জীবনযাত্রাকে কেন্দ্র করে লেখা হয়েছে। কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার কিছু গানে পদ্মার হারানো ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য তুলে ধরেছেন। এছাড়াও, আবু ইসহাক এর উপন্যাস "পদ্মার পলিদ্বীপ" পদ্মার পাড়ের সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে লেখা।
"কীর্তিনাশা" নাম:
পদ্মা নদী রাজা রাজবল্লভের কীর্তির ধ্বংসের কারণে "কীর্তিনাশা" নামেও পরিচিত। এটি পদ্মার ভাঙ্গনের কারণে রাজবল্লভের রাজ্য ধ্বংস হওয়ার সাথে সম্পর্কিত।
পদ্মা নদী বাংলাদেশের ইতিহাস, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, ও জীববৈচিত্র্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে এবং এর নৈসর্গিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহ্য আমাদের সংস্কৃতির অমূল্য অংশ।