বাংলাদেশের জেড ফোর্স

 জেড ফোর্স (বাংলাদেশ), বাংলাদেশের একটি বিশেষ সামরিক ইউনিট যা মূলত ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে গঠন করা হয়েছিল। এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল এবং স্বাধীনতার সংগ্রামে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

জেড ফোর্সের অন্যতম মূল লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর বিপক্ষে গেরিলা যুদ্ধ চালানো এবং তাদের অস্ত্রশস্ত্র ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম ধ্বংস করা। এই ফোর্সটি তখনকার পরিস্থিতিতে এমন একটি শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় যা পাকিস্তানি সেনাদের মধ্যে ভীতি তৈরি করতে সক্ষম হয়।

পটভূমি ও প্রেক্ষাপট

জেড ফোর্স বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ বাহিনী হিসেবে কাজ করেছে। ২৫শে মার্চ ১৯৭১ সালের রাতের নারকীয় হামলার পর, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালানোর জন্য বাঙালি সেনা কর্মকর্তারা বিচ্ছিন্নভাবে বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং তাদের সীমিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর আক্রমণ শুরু করে। তবে দ্রুত তারা উপলব্ধি করে যে, পরিকল্পিত আক্রমণ ছাড়া শত্রুদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব নয়, তাই তারা পুরো দেশকে সেক্টরে ভাগ করে সুসংহতভাবে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়।

এই পরিস্থিতিতে, পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ার জন্য মুক্তিবাহিনী ব্রিগেড গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে, ১৯৭১ সালের জুন মাসে ৮, থিয়েটার রোড, কলকাতা-এ একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা হয়, যেখানে মুক্তিবাহিনীর প্রথম ব্রিগেড গঠন করা হয়। তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমানকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি দেওয়া হয় এবং তিনি এই ব্রিগেডের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, কারণ তিনি উপস্থিত সদস্যদের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র ছিলেন।

অতঃপর, ১৯৭১ সালের ৭ জুলাই সরকার গেজেটের মাধ্যমে জেড ফোর্স গঠনকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে, যদিও এর সিদ্ধান্ত আগে নেওয়া হয়েছিল। ব্রিগেডটির সদর দপ্তর ছিল ভারতের তুরা, তেলঢালা, যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল।

জেড ফোর্সের সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল এবং পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল, বিশেষত সম্মুখ যুদ্ধে তাদের দক্ষতা ও সাহসিকতার জন্য প্রশংসিত হয়।

জেড ফোর্স: গঠন ও কার্যক্রম

প্রশিক্ষণ শিবির ও প্রাথমিক অবস্থা
জেড ফোর্সের প্রশিক্ষণ শিবির শুরু হয় ভারতের মেঘালয়ের দুর্গম তুরা এলাকায়। এখানেই বিভিন্ন বয়স ও পেশাজীবী মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার প্রতি গভীর আকাঙ্ক্ষা ও চেতনা একত্রিত হয়ে একটি শক্তিশালী ব্রিগেডে পরিণত হয়।

ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১ম ব্যাটালিয়ন যশোর সেনানিবাস থেকে বিদ্রোহ ঘোষণা করার পর, মেজর হাফিজের নেতৃত্বে সৈন্যরা পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে তীব্র লড়াইয়ের পর সীমান্ত অতিক্রম করতে সক্ষম হয়। একইভাবে, ৩য় ব্যাটালিয়নও ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ৮ম ব্যাটালিয়ন ছিল সম্পূর্ণ নতুন এবং শক্তি সীমিত। তবে এই তিনটি ব্যাটালিয়ন মিলিয়ে জেড ফোর্স গঠন করা হয় এবং দ্রুত সুশৃঙ্খল ও সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী প্রধান মেজর হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ ও মেজর শরীফুল হক (ডালিম)-কে দায়িত্ব দেন, যাদের মাধ্যমে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্যদের সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়। খুলনা-কুষ্টিয়ার যুব শিবির থেকে ৬০০ যুবক সংগ্রহের মাধ্যমে ১ম ব্যাটালিয়নের সদস্য সংখ্যা ৮০০ তে পৌঁছায়। মেজর শরীফুল হক ৩য় ব্যাটালিয়নের আরও ৫০০ সদস্য সংগ্রহ করেন।

দায়িত্ব বন্টন
মেজর মইনুল হোসেন চৌধুরীকে ১ম ব্যাটালিয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং মেজর শাফায়াত জামিলকে ৩য় ব্যাটালিয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ৮ম ব্যাটালিয়নের দায়িত্ব গ্রহণ করেন মেজর এ. জে. এম. আমিনুল হক। ছয় সপ্তাহের প্রশিক্ষণ শেষে, জেড ফোর্স একটি শক্তিশালী ব্রিগেডে পরিণত হয়।

ব্রিগেডের কাঠামো

  • ব্রিগেড কমান্ডার: মেজর জিয়াউর রহমান
  • ব্রিগেড মেজর: ক্যাপ্টেন অলি আহমেদ
  • ডি-কিউ কর্মকর্তা: ক্যাপ্টেন সাদেক
  • সংকেত কর্মকর্তা: ক্যাপ্টেন আব্দুল হালিম
  • ব্রিগেড মেডিকেল অফিসার: আব্দুল হাই মিয়া

১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট

  • কমান্ডিং অফিসার: মেজর মইনুল হোসেন চৌধুরী ও মেজর জিয়াউদ্দিন আহমেদ
  • সেকেন্ড-ইন-কমান্ড: অধিনায়ক মোহাম্মদ বজলুল গণি পাটোয়ারী
  • এ কোম্পানি কমান্ডার: ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান
  • বি কোম্পানি কমান্ডার: ক্যাপ্টেন হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ
  • ডি কোম্পানি কমান্ডার: ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন মমতাজ

৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট

  • কমান্ডিং অফিসার: মেজর শাফায়াত জামিল
  • সেকেন্ড-ইন-কমান্ড: ক্যাপ্টেন মহসিন
  • এ কোম্পানি কমান্ডার: ক্যাপ্টেন আনোয়ার হোসেন
  • ডি কোম্পানি কমান্ডার: লেফটেন্যান্ট এস আই বি নুরুন্নবী খান

৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট

  • কমান্ডিং অফিসার: মেজর এ জে এম আমিনুল হক
  • সেকেন্ড-ইন-কমান্ড: অধিনায়ক খালেকুজ্জামান চৌধুরী
  • এ কোম্পানি কমান্ডার: ক্যাপ্টেন আমীন আহম্মেদ চৌধুরী
  • ডি কোম্পানি কমান্ডার: লেফটেন্যান্ট মাহবুবুল আলম

২য় ফিল্ড আর্টিলারি ব্যাটারি

  • অফিসার ইন চার্জ: খন্দকার আবদুর রশিদ
  • কর্মকর্তা: ক্যাপ্টেন রাশেদ চৌধুরী

কামালপুর যুদ্ধ: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের এক ঐতিহাসিক অধ্যায়

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে এবং জামালপুর হয়ে ময়মনসিংহ সড়ক সংযোগে কামালপুর ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত ফাঁড়ি। এখানে গড়ে তোলা হয়েছিল গোলা-নিরোধী ছাদবিশিষ্ট কংক্রিট বাংকার এবং পরিখা, যা একে অপরের সাথে গভীর নালার মাধ্যমে যোগাযোগ করতে সক্ষম ছিল। ফাঁড়ির নিরাপত্তার জন্য স্ব-নিয়ন্ত্রিত ফাঁদ ও ভূমিবিস্ফোরক ব্যবহৃত হতো, এবং অন্ধকারের সময় পাকিস্তানি সৈন্যরা ভিতরে ঢুকে পড়ত।

আক্রমণের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন
১৯৭১ সালের ৩১ জুলাই দিবাগত রাতে (১লা অগাস্ট রাত) মেজর জিয়াউর রহমানের নির্দেশে, মেজর মইনুল হোসেনের নেতৃত্বে ডেল্টা এবং ব্রাভো কোম্পানি শত্রুপক্ষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। যদিও মেজর মইনুল হোসেন কামালপুরের মতো শক্তিশালী পাকিস্তানি ঘাঁটিতে সরাসরি আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না, তিনি গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানি বাহিনীকে দুর্বল করার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে জিয়াউর রহমানের নির্দেশের কারণে তিনি সেটপিস যুদ্ধের পক্ষে সায় দেন, যার ফলে আক্রমণটি সম্পন্ন হয়।

এ আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনীর ২০০ এরও বেশি সৈন্য নিহত হয় এবং তাদের মনোবলের উপর ব্যাপক ধাক্কা লাগে, একই সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এটি ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ উৎসাহের প্রতীক।

গেরিলা যুদ্ধ ও পরবর্তী আক্রমণ
কামালপুরে এটি ছিল প্রথম আক্রমণ, কিন্তু এখানে পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি নিয়মিত সেটপিস যুদ্ধ হয়। এসব যুদ্ধের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  • ২২ অক্টোবর
  • ১৪ নভেম্বর
  • ২৪ নভেম্বর
  • ৪ ডিসেম্বর

এছাড়া, এই এলাকা জুড়ে মোট ২০টি হিট অ্যান্ড রান গেরিলা আক্রমণ পরিচালিত হয়, যার প্রথমটি হয়েছিল ১২ জুন।

সাহসিকতার প্রতীক
কামালপুর যুদ্ধের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতার স্বীকৃতি হিসেবে ২৯ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বীর উত্তম ও বীর প্রতীক পদকে ভূষিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একমাত্র কামালপুরের যুদ্ধেই এত বিপুল সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা সম্মানিত হয়েছেন।

নকশি সীমান্ত ফাঁড়ির আক্রমণ: একটি সাহসী অভিযান

শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার নকশি সীমান্ত ফাঁড়ি ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর একটি শক্ত ঘাঁটি, যা তার ভৌগোলিক অবস্থান কারণে জেড ফোর্সের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। এই আক্রমণের নেতৃত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন আমিন আহমেদ (আলফা কোম্পানি) এবং লেফটেন্যান্ট মোদাসসের হোসেন (ডেল্টা কোম্পানি)। এছাড়া, সুবেদার হাকিমের ইপিআর কোম্পানিটি ছিল কাট অফ পার্টি হিসেবে নিয়োজিত এবং ফায়ারিং কভার দেয়ার দায়িত্বে ছিলেন ব্যাটালিয়ন কমান্ডার মেজর আমিনুল হক। ফাঁড়ির পাশে শালবনে ফরওয়ার্ড এরিয়া অ্যাসেম্বলি থেকে যুদ্ধ কোঅর্ডিনেট করছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান ওয়ারলেস যোগাযোগের মাধ্যমে।

আক্রমণের সূচনা
৩রা আগস্ট ভোর ৩টা ৪৫ মিনিটে, ক্যাপ্টেন আমিন আহমেদ চৌধুরী ও লেফটেন্যান্ট মোদাসসের হোসেন দ্রুততার সাথে তাদের দুই কোম্পানি নিয়ে শত্রুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। সঙ্গত কারণে, মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের যথেষ্ট অভাব ছিল, তবুও তারা অসামান্য দৃঢ়তার সঙ্গে পাকিস্তানি ঘাঁটির ৫০ গজের মধ্যে প্রবেশ করেন। পাকিস্তানি হানাদারদের প্রচণ্ড মর্টার আক্রমণের মাঝেও তারা শত্রুদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। পরবর্তীতে, মুক্তিবাহিনী ও জেড ফোর্স পাল্টা আক্রমণ চালানোর সময়, তারা সঙ্গে নিয়ে যাওয়া অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাইন দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর উপর আঘাত হানে।

যুদ্ধের সাফল্য ও হতাহত
যুদ্ধের এক পর্যায়ে, মেশিনগানের গুলিতে ক্যাপ্টেন আমিন আহমেদ আহত হন এবং তার জন্য ব্রাভো কোম্পানির মনোবল কমে যায়। এই যুদ্ধে মোট ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তবে, মেজর আমিনুল হক অসীম সাহসিকতা দেখিয়ে, দুই এনসিও ও জেসিওকে সঙ্গে নিয়ে নিজের জীবন বিপন্ন করে ক্যাপ্টেন আমিন আহমেদকে উদ্ধার করেন। তিনি হেভি মেশিনগানের আক্রমণের মধ্যেও ক্যাপ্টেন আমিনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন, যা তার সাহসিকতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অনন্য মুহূর্ত
নকশি সীমান্ত ফাঁড়ির আক্রমণ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সাহসিকতার প্রতীক হয়ে রয়েছে। এই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা তাদের অঙ্গীকার এবং সাহসিকতার মাধ্যমে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন।

ঘাসিপুরে জেড ফোর্সের শক্ত অবস্থান ও কামালপুর ঘাঁটির প্রতিরক্ষা

১০ই সেপ্টেম্বর, ১৯৭১-এ, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১ম ব্যাটালিয়নের ডেল্টা ফোর্স শক্ত অবস্থানে ঘাসিপুরে অবস্থান নেয়, যা কামালপুর সীমান্ত ফাঁড়ির খুব কাছেই অবস্থিত ছিল। ঘাসিপুর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল, কারণ এটি খাদ্য, যোগাযোগ ও অন্যান্য বিভিন্ন সুবিধার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এর কারণে, জেড ফোর্সের ঘাসিপুরে শক্ত অবস্থান কামালপুর ঘাঁটির জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য একটি দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণ
কামালপুর ঘাঁটি সুরক্ষিত রাখতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী জেড ফোর্সের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। তবে, জেড ফোর্সের সদস্যরা অসামান্য দৃঢ়তা এবং সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করেন। এই আক্রমণ সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয় এবং পাকিস্তানি বাহিনী ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে, এরপর তারা পিছু হটে যায়।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা
এই যুদ্ধে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ল্যান্স নায়েক ইউসুফ এবং সুবেদার মোজাম্মেল শহীদ হন, তাদের আত্মত্যাগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অম্লান হয়ে থাকবে।

জেড ফোর্সের পরিচালিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধগুলোতে অন্তর্ভুক্ত ছিল:

  1. বাহাদুরাবাদ যুদ্ধ
  2. দেওয়ানগঞ্জ থানা আক্রমণ
  3. চিলমারী উভচর অভিযান
  4. হাজীপাড়া যুদ্ধ
  5. ছোটখাল যুদ্ধ
  6. গোয়াইনঘাট যুদ্ধ
  7. টেংরাটিলা যুদ্ধ
  8. গোবিন্দগঞ্জ আক্রমণ
  9. সালুটিকর বিমানবন্দর আক্রমণ
  10. ধলাই চা-বাগান যুদ্ধ
  11. ধামাই চা-বাগান যুদ্ধ
  12. জকিগঞ্জ আক্রমণ
  13. আলি-ময়দান যুদ্ধ
  14. এমসি কলেজ যুদ্ধ
  15. ভানুগাছ যুদ্ধ
  16. কানাইঘাট যুদ্ধ
  17. বয়মপুর যুদ্ধ
  18. ফুলতলা চা-বাগান যুদ্ধ
  19. সাগরনালা চা-বাগান যুদ্ধ
  20. লাতু যুদ্ধ
  21. বড়লেখা যুদ্ধ

রৌমারীর প্রশাসন প্রতিষ্ঠা

১৯৭১ সালের আগস্টের শেষদিকে কুড়িগ্রামের রৌমারী অঞ্চল স্বাধীন হয়। এই অঞ্চলের দখল নেওয়ার পর, জিয়াউর রহমান ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের লেফটেন্যান্ট এস আই বি নুরুন্নবি খানকে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের পক্ষে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার দায়িত্ব দেন। শাফায়াত জামিলকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ভবিষ্যতে যেকোনো আক্রমণ ঠেকানোর জন্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

লেফটেন্যান্ট নুরুন্নবি খান তার দায়িত্ব গ্রহণের পর, স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে প্রশাসনিক কাঠামো গঠন করেন। ১৯৭১ সালের ২৭ আগস্ট, তিনি বেশ কিছু কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, যার মধ্যে একটি হাসপাতালও ছিল। এর মাধ্যমে, জিয়াউর রহমান কর্তৃক গঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রশাসনিক ব্যবস্থা, যা একটি স্বাধীনকৃত অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

এনবিসি চ্যানেল একটি তথ্যচিত্র "দ্য কান্ট্রি মেড ফর ডিজাস্টার" (The Country Made for Disaster) নির্মাণ করে, যেখানে রৌমারীর স্বাধীন ভূমির উল্লেখ করা হয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post