বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ- Bangiya Sahitya Parishat

 

বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে বাংলা সাহিত্যের উন্নতি ও প্রসারের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণা, অন্যান্য ভাষার গ্রন্থের অনুবাদ, দুর্লভ বাংলা রচনা সংরক্ষণ এবং গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশে এই পরিষদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঊনিশ ও বিশ শতকের প্রায় সব বাঙালি মনীষীই এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যা বাংলা সাহিত্যের অগ্রগতিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।

প্রতিষ্ঠা  ও বিস্তৃতি 

১৮৯৩ সালের ২৩ জুলাই এল. লিউটার্ড ও ক্ষেত্রপাল চক্রবর্তীর উদ্যোগে "বেঙ্গল একাডেমি অব লিটারেচার" নামে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং প্রথম সভাপতি ছিলেন বিনয়কৃষ্ণ দেব। তবে, সদস্যদের আপত্তিতে ১৮৯৪ সালের ২৯ এপ্রিল এর নাম পরিবর্তন করে “বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ” রাখা হয়। পরিষদের কার্যক্রম শুরু হয় কলকাতার শোভাবাজারে বিনয়কৃষ্ণ দেবের বাসভবনে।

রমেশচন্দ্র দত্ত পরিষদের প্রথম সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং পরবর্তীতে চন্দ্রনাথ বসু, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী প্রমুখ মনীষীরা এই পদ অলঙ্কৃত করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯৪ সালে সহ-সভাপতি মনোনীত হন এবং বহু বছর ধরে পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

১৮৯৯ সালে দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে পরিষদের নিজস্ব কার্যালয়ের জন্য একটি ভাড়া বাড়িতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০শ শতকের প্রথম দশকে এর সদস্যসংখ্যা ৫২৩-এ উন্নীত হয়, এবং পরবর্তীতে এর শাখা প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯০৬ সালে রংপুরে প্রথম শাখা স্থাপিত হয়, এবং বাংলা ও বাংলার বাইরের বিভিন্ন জেলায় আরও ৩০টি শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। কাসিমবাজারের মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী পরিষদকে সাত কাঠা জমি দান করেন, যেখানে ১৯০৯ সালে স্থায়ী কার্যালয় স্থানান্তরিত হয়।

বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ বাংলা ভাষার গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশ, দুষ্প্রাপ্য বাংলা পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ, এবং সাহিত্যিকদের আর্থিক সহায়তায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। পরিষদের গ্রন্থাগারে প্রায় ১.৫ লক্ষ পুস্তক ও সাত হাজারের বেশি প্রাচীন পুথি রয়েছে, যার মধ্যে শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের একমাত্র পুথি উল্লেখযোগ্য।

Post a Comment

Previous Post Next Post