গোঁজলা গুঁই (Gojla Gui) গোঁজলা গুঁই ছিলেন বাংলা কবিগানের এক প্রাচীন এবং বিখ্যাত কবিয়াল, যিনি সম্ভবত ১৭০৪ সালের কাছাকাছি সময়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি বাংলার লোকসংগীত তথা কবিগানের প্রথম পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। গোঁজলা গুঁইয়ের গানের মধ্যে ছিল টপ্পা এবং টিকারা-সংগীতর রীতি, যা কবিগানের এক বিশেষ শাখা হিসেবে পরিচিত।
গোঁজলা গুঁই ছিলেন এক ধরনের প্রথম পেশাদার কবিয়াল, এবং তার সৃষ্ট গানের রচনা এবং পরিবেশন শৈলী অনেকের কাছে প্রভাবিত করেছিল। তার শিষ্যরা পরবর্তীতে বাংলা কবিগানের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন, যেমন লালু–নন্দলাল, কেষ্টা মুচি, রঘুনাথ দাস, এবং রামজি। গোঁজলা গুঁইয়ের গানের মধ্যে সাধারণত জীবনধর্মী, মানবিক অনুভূতি এবং সমাজের নানা দিক নিয়ে আলোচনা হত।
গোঁজলা গুঁইয়ের একটি গান ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিলেন, যা থেকে বোঝা যায় তার কাজ বাংলা সাহিত্য এবং কবিগানকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে। তার পত্রিকার সংবাদ প্রভাকর-এ ১২৬১ সালের ১লা অগ্রহায়ণ তার লেখায় উল্লেখ করেছিলেন, "১৪০ এক শত চল্লিশ বৎসরের এ দিক নহে, বরং অধিক হইবে, গোঁজলা গুই গান প্রস্তুত করেন," যা গোঁজলা গুঁইয়ের সাংস্কৃতিক অবদানকে বিশেষভাবে সম্মানিত করে।
এই উক্তির মাধ্যমে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত গোঁজলা গুঁইকে কবিগানের জনক হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং তাঁর কৃতিত্বকে বাংলা কবিগানের ইতিহাসে অমূল্য হিসেবে স্বীকার করেন। এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে, গোঁজলা গুঁইয়ের গান ও কবিগানের ধারা দীর্ঘকাল ধরে চলতে থাকবে, যা পরবর্তীকালে বাংলার লোকসংগীত এবং কবিগানের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছিল।
এছাড়াও, গোঁজলা গুঁইয়ের সমসাময়িক কবিয়ালদের মধ্যে ছিলেন রাসু নৃসিংহ, লালু, কেষ্টা মুচি, এবং নন্দলাল। অনেক ইতিহাসবিদ এবং গবেষক মনে করেন যে, এই সমস্ত কবিয়াল গোঁজলা গুঁইয়ের শিষ্য ছিলেন, যারা তার শৈলী ও প্রতিভা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কবিগান পরিবেশন করতেন এবং নিজস্বভাবে এই শিল্পধারার বিকাশ ঘটিয়েছিলেন। গোঁজলা গুঁই মূলত বাংলা লোকসংগীতের সেই যুগের অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন, যারা কবিগানকে একটি সৃজনশীল এবং জনগণের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন।
কবিগানের জনক
গোঁজলা গুঁই-কে বাংলার কবিগানের জনক হিসেবে অভিহিত করা হয়। তার যাত্রা ছিল কবিগানের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচনকারী। তিনি ছিলেন একজন প্রাথমিক কবিয়াল, যিনি কবিগানের প্রথম পর্যায়ের সৃজনশীলতা এবং জনপ্রিয়তায় বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন। তার গানে ছিল টপ্পা এবং টিকারা-সংগীতর প্রভাব, যা পরবর্তীতে কবিগানের বিভিন্ন শাখায় বিস্তৃত হয়ে ওঠে।
গোঁজলা গুঁইয়ের তৈরি করা গানগুলি সাধারণত পেশাদার কবিগানের আসরে পরিবেশন করা হত, এবং তাঁর অনন্য প্রতিভা এবং গানের শৈলী অনেককে প্রভাবিত করেছিল। তিনি যেভাবে কবিগান পরিবেশন করতেন তা ছিল একদম মৌখিকভাবে, মুখে মুখে গানের রচনা ও সুর সৃষ্টি, যা সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পরিবেশন ছিল।
এছাড়া, গোঁজলা গুঁইয়ের শিষ্যদের মধ্যে অনেকেই পরবর্তীতে বিখ্যাত কবিয়াল হয়ে উঠেছিলেন এবং কবিগানের বিশাল ঐতিহ্য গড়ে উঠতে সাহায্য করেন। তাই তাকে কবিগানের জনক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়, কারণ তার মাধ্যমে এই সাংস্কৃতিক ধারাটি জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং বাংলা লোকসংগীতের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে।